বেকসুর খালাস
দ্বারক ঘোষ
দাঙ্গার খবর ছড়িয়েছে দেশজুড়ে !
খবরাখবর নিয়ে জানা গেল, না দাঙ্গা নয়।
![]() |
from net |
'এ'-পক্ষের হতাহতের খবর নেই কিছু ।
হনুমানপুত্রদের জয়জয়কার ।
ওদের মেরেছে গুনে গুনে,
দাউ দাউ জ্বলেছে আগুন—
স্বপ্নের ঘর পুড়েছে ,মাথায় পড়েছে আকাশ ভেঙে ।
ভয়ার্ত চিৎকার, করুণ আর্তনাদ—
অসহায় ধরণী অস্থির।
উল্লসিত সম্রাট নীরোর উত্তরসূরীরা—
গেরুয়াবৃত বীর।
'ওদের' ছায়া মাড়ালে জাত যায় !
বেজাত বালিকার বলাৎকারে জেগে ওঠে বীরত্ব।
গর্ভের ভ্রুণ তীক্ষ্ণ তরবারির ডগায়—
আঁধারের পৃথিবীটা অবলোকন করে।
পুষ্পমালায় বরিত বজরংবীরেরা !
মরণের দ্বারে বিবেক হাসে, বিবেকের সর্বনাশে ;
বেদনার অশ্রু ছবি আঁকে—
ধরণীর ক্যানভাসে।
প্রতিদিনের ঘুম ভাঙ্গা চোখ দেখে ধরণীর ধর্ষণ।
দিল্লি হাথরাস কাশ্মীর কামদুনির কান্না শুনে সারা দেশ।
গেরুয়া দর্শন-এর বিষ স্রোতে বহমান
ধর্মান্ধতা জাতপাত বিভাজন বিদ্বেষ।
ধর্ষণ— উচ্চ বর্ণের ভোগ্যাধিকার।
ধর্ষণ! কোথাও হয়না ধর্ষণ কোনো—
গণহত্যা !
মিথ্যে— সব মিথ্যে—
কোথ্থাও ঘটেনি কখ্খনো।
যত খুন ধর্ষণ গণহত্যা— সব ঘটিয়েছে ভূতে ;
ন্যায়াধীশকে সে কথা বলে দিয়েছে কানে কানে—
রাম-রাজত্বের গেরুয়াদূতে।
পুরোহিত-ভক্তের কামযজ্ঞে আহূতি বারোর বালিকা।
উন্নাহের মন্দির ধন্য !
সবইতো উনার ইচ্ছা—
নেপথ্যের মঞ্চে মন কি বাত গণ্য।
হাথরাসে 'বাল্মীকি' ধর্ষিত—
নতুন রামায়ণে বজরংপুত্রদের নয়া অভ্যুত্থান।
ধর্ষণ নয়— উচ্চবর্ণের অধিকার বর্ষিত।
" বিশ্বাসে মিলায় বস্তু,তর্কে বহু দূর"
প্রবাদ-মান্যতায় আমি 'সর্বোচ্চ ন্যয়াধীশ'—
গেরুয়া পটিতে বাঁধা বাধ্য আমার এক চোখ—
'পুত্রদের' লেজে বাঁধা দাঁড়িপাল্লা হাতে কাঠপুতলি।
'হনুমান দর্শন'-এ কিঞ্চিৎ দুর্বল আমি—
গেরুয়াদের গলায় মেলায় সুর।
'ওদের' কাগজ চাই—
শত শতাব্দীর আদিম মাটিতে ওরা অবাঞ্ছিত—
কেড়ে নাও ওদের দেশ, কেড়ে নাও ওদের বাস,
নিঃশেষিত কর সুস্থ শ্বাস—
ওরা বহিরাগত ;
গণহত্যা, ধর্ষণ সব মিথ্যা যত।
আমি ন্যায়াধীশ—
বজরংদের দাসানুদাস।
তাহলে বাবরি মসজিদ ?
বাবরি ভাঙলো কারা!
কে দেবে এর দাওয়াই!
সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া 'এদের ' দিতে পারিনা ফাঁসি—পারিনা দিতে কারবাস ;
জেনো, বাবরি ধ্বংস হয়েছে হাওয়ায়।
আমি ন্যায়াধীশ—
আমি কি চাইতে পারি পবনপুত্রদের সর্বনাশ !
তাইতো ন্যায়ালয়ে আমার রায়—
খালাস—
গেরুয়াশ্রিত বীর বজরংরা সব বেকসুর খালাস।