রাজপথে ছাপাখানার গলি

রাজপথে ছাপাখানার গলি


rajpothe chhapakhanar gali
ছবি চন্দ্রপ্রকাশ সরকারের ফেসবুক দেওয়াল 


ইতিহাসের শহর বহরমপুর। বহরমপুরের মধুপুর এলাকার একটি রাস্তার নাম ছাপাখানার গলি। সেই গলিতে দেবাশীষ সাহার বসবাস। পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী। নেশা কবিতা লেখা তথা সাহিত্যকর্ম। তাঁর সম্পাদনায় ২০০৪ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে 'ছাপাখানার গলি'। গল্প-কবিতা-উপন্যাস এতে ছাপা হয় না, এতে ছাপা হয় উপন্যাস বা গল্প-কবিতার বই এবং পত্রপত্রিকা সম্পর্কিত আলোচনা। সে হিসেবে এটি একটি আলোচনার কাগজ।
বিগত ১৮ বছর ধরে বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি যেমন এই অনন্য কাগজটিতে লিখেছেন তেমনি জীবৎকালে কবি শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি বিশেষ সংখ্যা। আপন চারিত্রমাধুর্যেই বাংলার সাংস্কৃতিক জগতের চিত্ত জয় করে নিয়েছে ছাপাখানার গলি। সে আজ বিপুলভাবে সমাদৃত বাংলার সাহিত্যমহলে। স্বভাবতই তার আহ্বানে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দিয়ে সারা বাংলার অনুরাগীদের একাংশ আজ সমবেত হয়েছিলেন কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি হলে। উপলক্ষ্য আত্মজীবনী সংখ্যার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ। কথাসাহিত্যিক সাধন চট্টোপাধ্যায়, লিটলম্যাগ আন্দোলনের পুরোধা সন্দীপ দত্ত, পরিচয়-সম্পাদক অভ্র ঘোষ এবং ওই পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য প্রণব বিশ্বাসের হাত দিয়ে প্রকাশিত হল অভিনব এই সংখ্যাটি। প্রবীণ অভ্র ঘোষ সবিস্ময়ে বলেন, "আত্মস্মৃতি নিয়ে এত বড় মাপের কাজ আগে কেউ করেননি। এই কাজের মধ্য দিয়ে ছাপাখানার গলির গুরুত্বপূর্ণ জায়গা তৈরি হয়ে গেল।" লিটল ম্যাগের প্রবাদপ্রতিম সংগ্রাহক সন্দীপ দত্ত সম্পাদক দেবাশীষ সাহার কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে বলেন, "দেবাশীষ মাকড়সার জাল তৈরি করেছে, সেই জালে ধরা পড়ে যায় অনেকে!" প্রবীণ প্রণব বিশ্বাস যথার্থই বলেন,"অনেক খ্যাতনামা লিটল ম্যাগাজিন পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, কিন্তু ছাপাখানার গলি তেমনটি নয়।" প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সাধন চট্টোপাধ্যায়ের মতে, "এই রাজ্যে এমন কিছু পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে বা হচ্ছে, যারা ছাপাখানার গলির দ্বারা প্রভাবিত।" ছাপাখানার গলির অন্যতম সহযোদ্ধা বহরমপুর থেকে আগত বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী কৃষ্ণজিৎ সেনগুপ্ত তাঁর মনোজ্ঞ আলোচনায় আজকের অনুষ্ঠানকে 'কলকাতার আকাশে বহরমপুরের এক টুকরো মেঘ' নামে অভিহিত করেন। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক প্রকাশ দাস বিশ্বাস ছাপাখানার গলির উদ্যোগে আয়োজিত ২২টি পাঠচক্রে শতাধিক গ্রন্থের আলোচনা বিষয়ে আলোকপাত করেন। প্রারম্ভিক বক্তব্যে সম্পাদক দেবাশীষ সাহা এই পত্রিকার সূচনা থেকে শুরু করে বড় হয়ে ওঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরেন। কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন সংবাদ-সাহিত্য সাপ্তাহিক ঝড় পত্রিকার প্রয়াত কার্যকরী সম্পাদক রবীন বিশ্বাসের কথা। "রবীনদাই আমার কলজে চিরে সাহস ভরে দিয়েছিলেন" -- অকপটে বললেন দেবাশীষ। চলার পথে প্রয়াত কবি ও সম্পাদক এবাদুল হক, নারায়ণ ঘোষ, কবি নাসের হোসেন, নারায়ণ মুখোপাধ্যায় প্রমুখের সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন। আজকের এই ছিমছাম অনুষ্ঠানে প্রত্যেক আলোচকই সময়সীমার প্রতি সুবিচার করে নিজেদের পরিমিতিবোধকে বেঁধে রেখেছিলেন ঘড়ির কাঁটায়।
এহেন মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারার সুবাদে আমিও এই পত্রিকার সূচনালগ্ন থেকে সম্পৃক্ত থাকার এবং বহরমপুর সম্পর্কে শ্লাঘা প্রকাশের সুযোগ হাতছাড়া করিনি! আজকের বুধসন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত গবেষক আশীষ খাস্তগীর, কবি অরণি বসু, বুবুন চট্টোপাধ্যায়, গল্পকার কামাল হোসেন, উপন্যাসিক দেবকুমার সোম, তৃষ্ণা বসাক, আকাশবাণীর প্রাক্তন অধিকর্তা ভবেশ দাস, গায়ক ও প্রাবন্ধিক স্বপন সোম, প্রাক্তন সাংসদ তথা লেখক মইনুল হাসান, অধ্যাপিকা দেবযানী ভৌমিক চক্রবর্তী, স্বপ্না রায় প্রমুখের মতো গুণী মানুষেরা। অনুষ্ঠানে যথাক্রমে নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথের গান পরিবেশন করেন অফেলিয়া চ্যাটার্জী এবং ডা. শুভ্রেন্দু চক্রবর্তী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন প্রবীর মন্ডল।
✍️
চন্দ্রপ্রকাশ সরকার
২৮ মে ২০২২

Post a Comment

ধন্যবাদ

أحدث أقدم