মুখ্যমন্ত্রীর যে কথায় ধর্ষকরা উৎসাহিত হয়!

নষ্ট মেয়ে
চন্দ্রপ্রকাশ সরকার
google keyword

এই প্রজন্মের প্রায় কেউই ফেলেনি বসাকের নাম শোনেননি। কি করেই বা শুনবেন, সে তো গত শতকের নব্বইয়ের দশকের ঘটনা! নদীয়ার স্বনামখ্যাত জনপদ ফুলিয়ার এক মূক ও বধির মেয়ে ফেলেনি ধর্ষিত হন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মহাকরণের করিডরে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ঘরের সামনে ধর্ণায় বসেন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসক সিপিএমের কর্মী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির কর্মীরা চুলের মুঠি ধরে টেনে-হিঁচড়ে মহাকরণ থেকে বের করে দেয় তাঁকে। পরের দিন সমস্ত কাগজে শিরোনাম হয় সেই ঘটনা। সেই মমতা ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার সাথে সাথে শান্তিকামী রাজ্যবাসী স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিলেন এরাজ্যে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়া তো দূরের কথা, এই রাজ্য এখন নারী পাচার, নারী নির্যাতনের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। ফেলেনি বসাকের সেই নদীয়া জেলার হাঁসখালিতে ১৬ বছরের নাবালিকা গণধর্ষণের পরিণামে মারা যায় গত ৫ এপ্রিল। পুলিশকে না জানিয়ে, পোস্টমর্টেম না করে মৃতদেহ দাহ করে দেওয়া হয়। এমন একটি নির্মম ঘটনা প্রকাশ্যে আসে পাঁচ দিন পরে! অভিযুক্ত প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে ও তার বন্ধুরা। ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনার সাথে তুলনা করা হচ্ছে। এমন একটি ঘটনাকেও 'ছোট্ট ঘটনা' বলে অভিহিত করে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত অসংবেদনশীল, নিষ্ঠুর মন্তব্যে মেয়েটির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মেয়েটির প্রেম ছিল, সে অন্তঃসত্তা ছিলো ইত্যাদি অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে তদন্তের আগেই কার্যত পুলিশের ইতিকর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন তিনি। ভাবখানা যেন তথাকথিত খারাপ চরিত্রের নারীদের ধর্ষণ করে মেরে ফেলার অধিকার দুষ্কৃতীদের রয়েছে!

রাজ্যের নারী মুখ্যমন্ত্রী যে নারীদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতিশীল নন তার আভাস তাঁর রাজ্যপাটে বসার অব্যবহিত পরেই পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডে পাওয়া গিয়েছিল। তদন্ত শুরুর আগেই তিনি ঘটনাটিকে 'সাজানো' বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন। দক্ষ গোয়েন্দাপ্রধান আইপিএস দময়ন্তী সেন মুখ্যমন্ত্রীর উক্তিতে সীলমোহর না লাগিয়ে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করেছিলেন। সেই অপরাধে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী শ্রীমতি সেনের পদাবনতি ঘটান। তারপর কামদুনির ছাত্রী ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডকেও ধামাচাপা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়।

অনেকেই আশা করেন, রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদাধিকারী একজন নারী হলেই রাজ্যের নির্যাতিত নারীদের প্রতি বাড়তি সহানুভূতিশীল হবেন। বাস্তবে কিন্তু তা হয় না। শাসকের একটা নিজস্ব চরিত্র থাকে। সেই চরিত্রানুযায়ী মাদকের সাথে নারী নির্যাতনসহ নানাবিধ অপরাধের নিবিড় সংযোগের কথা জেনেবুঝেও সরকারিভাবে মাদকের প্রসারে মদত করা হয়। এমনকি দায়িত্বশীল নারী সংগঠনের আপত্তি উপেক্ষা করে কার্যত দুয়ারে মদ প্রকল্প চালু করেছেন এই রাজ্যের নারী মুখ্যমন্ত্রী। হাঁসখালির ঘটনায় প্রতিবাদরত নারী-পুরুষকে নির্বিচারে রক্তাক্ত করেছে তাঁর পুলিশ।
✍️
চন্দ্রপ্রকাশ সরকার
১৮ এপ্রিল ২০২২
(লেখাটি ৫৪ বছর বয়সী সংবাদ-সাহিত্য সাপ্তাহিক ঝড় পত্রিকার মুখ ও মুখোশ কলামে আজ প্রকাশিত হয়েছে। ফেসবুক বন্ধুদের সাথে ভাগ করে নিলাম।)

Post a Comment

ধন্যবাদ

Previous Post Next Post