মানুষ প্রখর অনুভুতি প্রবন প্রানী হয়ায় সুখ
সম্পর্কে বেশী লোভী, তাই শরীরের সামান্য ব্যথা বেদনার প্রশমনের জন্যে ছোটাছুটি
শুরু করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু সাধারণ ধারণা থাকলে নিজেরায় নিজেদেরকে সুস্থ্য
রাখতে পারেন। এই সম্পর্কেই কিছু পরামর্শ দিলেন বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক ডা. নির্মলকুমার সাহা
* কোন ঔষধই
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন নয় – ব্যবহার অত্যন্ত সাবধানে করা উচিৎ ।
* দুটি ঔষধ
নিজের মধ্যে ক্রিয়া-বিক্রিয়া করে এবং শরীরের মারাত্মক করতে পারে। এ ব্যপারে সাধারণ
মানুষের এবং সমাজের জ্ঞান বৃদ্ধির দরকার আছে।
* বিশ্বের
কোন সভ্য দেশে ঔসধের দোকানের কাউন্টারে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষধ বিক্রি নিষিদ্ধ।
ভারতে এই ব্যবস্থা সার্বিক স্বাস্থ্যের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে।
* অম্বল
(অ্যাসিড) শরীরের অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যরস, যা প্রোটিন হজমে সাহায্য করে। কোনভাবেই
দীর্ঘকালীন অম্বল বন্ধ বা কম ক্ষরণ হওয়ার ঔষধ, শরীরের কোন উপকার করতে পারে না, বরং
শরীরের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।
*’গ্যাস’
নামক কোন অসুখের কথা চিকিৎসার বই-এ লেখা নেই, যা লেখা আছে তা হল Gastric ulcer, Gastritis, Gastro intestinal disorder । এক্ষেত্রে Gastric শব্দটি লাতিন শব্দ, যার বাংলা অভিধানগত অর্থ হলো ‘পাকস্থলী’। সব অসুখকে
গ্যাসের অসুখ নামকরণ করে নিজেকে বোকা
প্রতিপন্ন করবেন না।
* ‘আমাশা’
নামক বস্তুটি আসলে অন্ত্র থেকে নিষ্কাসিত হওয়া এক ধরণের রস , যা ‘মল’কে পিছল রাখে।এই
মিউকাস শরীরে একদম না থাকলে, ‘মল’-এর প্রকৃতি শুকনো গোবরের (ঘুঁটের) ন্যায় হয়ে যাবে।
সেটা নিশ্চয় খুব সুখের হবে না। এটাও শরীরের অত্যন্ত প্রয়জোনীয় নিঃসৃত রস।
* ‘কাশী’
হলো শরীরের এক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। যখন ফুসফুসে কোন রকম খারাপ জিনিস যেমন ধূলো ,
ধোঁয়া, বিষাক্ত গ্যাস,বীজানু এবং ভাইরাস ভিতরে যায় – শরীর কাশীর সাহায্যে, সেই
আক্রমণকারীকে বের করে দেয়। এভাবে ফুসফুস নিজেকে সুস্থ রাখে। কোন ভাবেই কাশী বন্ধ
করার ঔষধ , সব সময় ফুসফুসের ভালো নাও করতে পারে। বরং ক্ষতিকারক জিনিস ফুসফুসে
অবস্থান করে এবং ভিতরে বসে গিয়ে বড় রকমের ক্ষতি সাধন করে যেমন Pneumonia ।
* একই
রকমভাবে বমি ও পাতলা পাইখানা শরীরের বিষবত জিনিসকে বের করে, শরীরকে সুস্থ রাখার
চেস্টা করে। ক্ষতিকারক জিনিস খেলে, প্রাথমিকভাবে বমি এবং পরে পাতলা পায়খানা শরীরের
বিষাক্ত জিনিসকে বের করে, নিজেকে প্রতিরোধ করে। বমি বা পায়খানা বন্ধ করার ঔষধ খেলে
বিষাক্ত বীজানু বা খাবারের বিষ শরীরে অবস্থান করে এবং বৃহৎ খতিসাধন করে, এমনকি
মৃত্যুও হতে পারে। কখন বমি বা পায়খানা বন্ধ করার ঔষধ ব্যবহার করা দরকার, সেটা
চিকিৎসকের পরামর্শ মতো করা উচিৎ। কেবলমাত্র ওরাল স্যালাইন এবং জিঙ্ক জাতীয় ঔষধ,
অনেক বেশী ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
* ‘মনের
জন্য দেহের রোগ’, এই সময়ের এক গোপন মহামারী। শতকরা চল্লিশ শতাংশ মানুষ এই অসুখের
শিকার। এই ধরণের রোগীরা বিভিন্ন ধরণের কষ্টের কথা বলেন, বিভিন্ন ডাক্তারবাবুর
পরামর্শমত ঔষধের চিকিৎসায় উপকৃত হবেন। সাধারণ মানুষ যারা সারাদিন ‘ভালো লাগে না’,
‘পারছি না’ আর ‘বিরক্ত লাগে’ বলেন, তারা হতাশা এবং অবসাদে ভুগছেন। এই রুগীরা
মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে পারেন।
* Psychosexual হল, আর এক Silent Disease । সমাজের অবক্ষয়, মুল্যবোধহীনতা, আদর্শহীনতা এবং টেলিভিশনে, সিনেমায়, সাহিত্যে,
ইন্টারনেটে, যেভাবে অসংযত যৌন জীবনের প্রচার চলছে – মানুষ নিজের অজান্তে এই রোগে
আক্রান্ত হচ্ছেন।সাবধানতায় এর একমাত্র মুক্তির পথ। সবচেয়ে দরকারি বিষয় হল, এই
অসুখের জন্যই আমরা আজ ‘সম্পরকের সংকটে’ কষ্ট পাচ্ছি।
* যে কোন
সরকারী হাসপাতালের বহিঃ এবং এমারজেন্সী বিভাগে, যে সমস্ত রুগীর পরামর্শ বা
চিকিৎসার প্রয়োজনে আসেন – তাদের ষাট শতাংশ রুগীর কোন ঔষধের প্রয়োজন হয় না।
কেবলমাত্র সাধারণ স্বাস্থ্যজ্ঞান, সাবধানতা, স্বাস্থ্য উপদেশ জানলে বা মাথায় রাখলে
হাসপাতালে বা ডাক্তারবাবুদের কাছে না গিয়ে, নিজেরাই বাড়ীতে রুগীর প্রাথমিক
পরিচর্যা করতে পারেন। কেবল মাত্র যখন ডাক্তারী পরামর্শ বা চিকিৎসার প্রয়োজন তখনই সেখানে
যোগাযোগ করুন।