নন্দীগ্রাম আর দিল্লী - চটি পুলিশ -শাসকের একই চরিত্র

     

google keyword
ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত 

 চটি পায়ে পুলিশ, জিন্স পরা পুলিশ, এ যেন নন্দীগ্রামের পুনরাবৃত্তি দেখছি দিল্লীর বুকে চলমান কৃষক আন্দোলন দমনে বিজেপি সরকারের কৌশলে।

      এ এক অদ্ভুত মিল । নন্দীগ্রাম ছিল কৃষকদের আন্দোলন, দিল্লীর বুকে চলমান আন্দোলনও কৃষকদের আন্দোলন । মিল আরও আছে।নন্দীগ্রাম জীবন-জীবিকা রক্ষার তাগিদে লড়ে ছিল, দিল্লীও তাই।পার্থক্য যেখানে সেটা হল নন্দীগ্রামে সরাসরি উচ্ছেদ হচ্ছিল সরকারী ব্যবস্থাপনায় পুরো এলাকার মানুষ যার কুফল এক দুই বছরের মধ্যেই উক্ত এলাকার মানুষ পেয়ে যেত। বাকি ভারত বর্ষের মানুষ কিছু অতিরিক্ত ভিখারীর সংখ্যা দেখতে পেত। আর দিল্লীর আন্দোলন ব্যর্থ হলে সারা ভারতের ৯৯% মানুষ ভিখারী বলুন, ক্রীতদাস বলুন হতে সময় লাগবে মোটামুটি ৭-৮ বছর।   

      আন্দোলন এর বিশেষ পার্থক্য পাঠকের জানা আবশ্যক । নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে রক্ষা করে দীর্ঘস্থায়ী রুপ দিতে গ্রামে যেন পুলিশ প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য আন্দোলনকারীরা রাস্তা খনন করেছিল। আর দিল্লীর আন্দোলন দমন করার জন্য বিজেপি পরিচালিত রাস্ট্রীয় বাহিনী নিজেই রাস্তা কেটে, পরিখা খনন করে প্রাচীন নগর রাষ্ট্র  রক্ষা করার মত ভারত থেকে ইন্ডিয়াকে আলাদা করে ফেলেছে। 

       আন্দোলন দমনে উভয় ক্ষেত্রে একই মিল পরিলক্ষিত হচ্ছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে বারবার বলা হয়েছে মাওবাদীদের চক্রান্ত, বহিরাগতদের আন্দোলন। রাজ্যের শাসক দল থেকে প্রচার তুলেছিল এটার পিছনে  বিদেশী এনজিওরা টাকা দিয়ে চাষিদের খেপাচ্ছে।  আন্দোলনকে জনসমর্থন যেন না পায় তার দিকে রাজ্যের প্রথম সারির প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া সংবাদ প্রচার করেনি একমাত্র কলকাতা টিভি ও দুই একটি অখ্যাত সংবাদপত্র ছাড়া । তবুও আন্দোলনের সংবাদ শুধু রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না । এই আন্দোলনের সংবাদ ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। সারা পৃথিবীতে নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে খেটে খাওয়া মানুষ লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা লাভ করে। তৎকালীন রাজ্য সরকারকে কেন্দ্র সরকার সমস্ত দিকে সাহায্য করে ছিল এই আন্দোলনকে ভাঙার জন্য। হিন্দু মুসলিম তাস খেলার জন্য তৎকালীন রাজ্য সরকার দিল্লীর সাহী ইমামকে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু নন্দীগ্রামের মুসলিম সম্প্রদায় ইমামকে কোন রুপ পাত্তা না দিয়ে জমি রক্ষার আন্দোলনে সেখানকার সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষের ঐক্য বজায় রেখে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। 

       নন্দীগ্রাম আন্দোলনের জাতীয় ও সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপ্ত্র গুলি সাহায্য ব্যতিরেকে বিশ্বব্যাপী প্রচার পেয়েছিল। মুক্তিকামী মানুষের লড়াইয়ের রসদ খোঁজার মানসিকতা এই আন্দোলনের সংবাদ ছড়িয়ে দিয়েছিল। সুদুর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন অ্যাটর্নী জেনারেল রামসে ক্লার্ক (যিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করে পদ ত্যাগ করেছিলেন এবং সাদ্দাম হুসেনের পক্ষ নিয়ে আইনের লড়াই করতে ইরাকে গিয়েছিলেন) নন্দীগ্রামে সশরীরে উপস্থিত হয়ে তৎকালীন রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করেছিলেন । আন্দোলন করতে নিহত পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করে সমবেদনা প্রকাশ করেন। ব্যস্ততার দিনে আজকাল মানুষ সবকিছু সহজে ভুলে যায় তাই জানা জিনিস পাঠককে আবার মনে করিয়ে দিলাম - যাতে শাসকদল ও শাসক শ্রেণীর রাজনীতি সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। 

      দিল্লীর ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা আমরা দেখতে পাচ্ছি- যা পাঠকের দুই মাস ধরে চলমান এই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ  ভুলে যাওয়ার কথা না । এই আন্দোলনকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নানা রকমভাবে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা জারি রেখেছে। কখন খালিস্তানিদের আন্দোলন, কখন শুধু পাঞ্জাবের বড় লোক চাষীদের আন্দোলন, কখন বিদেশী শুত্রুদের হাত আছে বলে দাগিয়ে দিচ্ছে। আর জাতীয় স্তরের টিভি চ্যানেল ও সর্বাধিক প্রচারপ্রাপ্ত  দৈনিক সংবাদপত্র গুলি কৃষক আন্দোলনকে ব্ল্যাক আউট করে রেখেছে শুধু এনডি টিভি ও আইপি চ্যানেল ছাড়া। ঘটনাগুলি মিলিয়ে দেখুন নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সাথে।  বিজেপির আইটি সেল অত্যন্ত শক্তিশালী। হিন্দুত্বের তাস খেলে একটা অংশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ভারতের কৃষক আন্দোলনের এই শক্তিশালী শ্রোতে সেই তাস আর কাজ করছে না। আজকে সারা পৃথিবী থেকে আন্দোলনের সমর্থনে বার্তা আসছে নামীদামী ব্যক্তিদের । যদিও খেটে খাওয়া মানুষ তাঁর বাঁচার তাগিদেই লড়াইয়ের ময়দানে আসে। 

    এখন দিল্লীর এই  আন্দোলন থেমে যাবে না নন্দীগ্রামের মত প্রাণ দিয়েও জয়ের লক্ষে পৌছাবে তা নির্ভর করবে দীপ সিধুর মত এজেন্টদের খুজে বের করে জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করার উপর। উপরিউক্ত আলোচনায় এটায় প্রতিভাত হয় তৎকালীন নন্দীগ্রাম আন্দোলন দমন করার জন্য যে সংগঠন কুখ্যাত ভুমিকা নিয়েছিল তারা কর্পোরেট হাউসের সার্থে ছলেবলে কৌশলে এই আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবে আর আন্দোলন থেমে গেলে লড়াকু কৃষকদের মনে হতাশা দানা বাঁধবে।    

Post a Comment

ধন্যবাদ

أحدث أقدم